মহাসড়কের পাঁচ এলাকায় অবরোধ আ.লীগের, ৬ ঘণ্টা পর কিছুটা স্বাভাবিক
ফরিদপুর প্রতিনিধি : কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র ফরিদপুরে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহাসড়কের অন্তত পাঁচ এলাকায় অবরোধ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ছয় ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে কর্মসূচি চলাকালীন এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিন জনকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিন ভোর ৬টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। সোয়াদী ও পুলিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। এতে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাধবপুর এলাকায় টায়ারে আগুন দিয়ে অবরোধ করা হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত দুটি মহাসড়কসহ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল কম দেখা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোর ৬টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড ও মুনসুরাবাদ এলাকায় অবরোধ করেন। পাশাপাশি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুখুরিয়া, মাধবপুর, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পুলিয়া এলাকায় অবরোধ করা হয়। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। অনেকের হাতে দেশীয় অস্ত্র ও রামদাসহ লাঠিসোঁটা দেখা যায়। পরে পুলিশের অনুরোধে দুপুর ১২টার দিকে সব স্থান থেকে অবরোধ তুলে নেন তারা।
বিকালে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যদিনের তুলনায় যানবাহন চলাচল একেবারেই কম। এসব সড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল দেখা গেলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল দেখা যায়নি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টহল দিতে দেখা যায়।
ফরিদপুরের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এজন্য বাস চলাচল বন্ধ আছে।
গোল্ডেন লাইন বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
ফরিদপুর বাসমালিক গ্রুপের নেতা কামরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা বাস চালাতে চাই। তবে যাত্রী না পেলে তো বাস চালানো সম্ভব নয়। খালি বাস তো সড়কে নামানো যায় না।’
সরেজমিনে দেখা যায়, সোয়াদী এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবরোধ করেন। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাধবপুর এলাকায়ও টায়ারে আগুন দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পুলিয়া এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলা যুবলীগ নেতা দেবাশীষ নয়নকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোয়াদী এলাকা থেকে ফেসবুকে লাইভ করতে দেখা যায়। তখন মহাসড়কটির ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শতাধিক নেতাকর্মী। তারা দেশি অস্ত্র রামদা, ঢাল-সড়কি হাতে মহাসড়কে অবস্থান করেন। এ সময় নারীদের পাশাপাশি বেশ কিছু শিশুকেও স্লোগান দিতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জমুখী ওই এলাকাটি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত। লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর সেখানে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন। ভোর থেকেই কয়েকজন নেতাকর্মী লকডাউনের সমর্থনে সড়কে অবস্থান নেন এবং পরে অন্যরা যোগ দিয়ে পুরো রাস্তা অবরোধ করেন। এতে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের দেখা গেছে।
এদিকে, অবরোধকারীদের ঠেকাতে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের নুরপুর বটতলা এলাকায় অবস্থান নেন উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। এ সময় এনসিপির উপজেলা সমন্বয়কারী মোহাম্মাদ আশরাফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের তিন নেতাকর্মীকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক আরিফুর রহমান পথিক। অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ বলেন, ‘আরিফুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতা চালানোর জন্য এসেছিল। পরে স্থানীয় লোকজন ধরে পুলিশে দিয়েছেন।’
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাধবপুরে অবরোধকারীরা অবরোধ করতে পারেননি। তবে ভাঙ্গার পুলিয়া এলাকায় অবরোধ করা হলেও সেটি পরে অপসারণ করা হয়েছে। বিকাল থেকে সব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধের সময় আওয়ামী লীগের নেতাসহ তিন ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তারা থানা হেফাজতে আছে।’