ঢাকা, বাংলাদেশ

কৃষিভূমি সুরক্ষা এখন সময়ের দাবী: ভূমি উপদেষ্টা

প্রকাশিত :

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলছেন; কৃষিজমি আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি। এই জমি হারালে আমরা হারাবো খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশের ভারসাম্য এবং কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি। তাই কৃষিজমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে কৃষিভূমি সুরক্ষা এখন সময়ের একান্ত দাবী।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমি উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘ভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ,২০২৫’ এর খসড়ার উপর ‘মতবিনিময়’ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অব্যবস্থাপনা, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের চাপে কৃষিজমি ভয়াবহভাবে হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিদিন অজস্র একর উর্বর জমি আবাসিক,বাণিজ্যিক কিংবা শিল্প ব্যবহারের জন্য নষ্ট হচ্ছে। কৃষকের জীবিকা সংকটাপন্ন হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

ভূমি উপদেষ্টা বলেন, কৃষিজমি কমে গেলে খাদ্য উৎপাদনও কমে যাবে। ফলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে কৃষিজমি আইনগতভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রামীণ অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কৃষিজমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিনিয়ত কৃষিভূমি কমে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কৃষিভূমি সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, শহর ও শিল্পাঞ্চল ক্রমে গ্রামীণ কৃষিভূমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার কৃষিভূমি সুরক্ষা ও জোনভিত্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ভূমির বিদ্যমান ব্যবহার, প্রকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ভূমিরুপ যথাযথভাবে পরীক্ষা করে, অত্যাধুনিক ডিজিটালাইজড প্রযুক্তির মাধ্যমে ধারণকৃত প্রতিচ্ছবি যথাযথ বিশ্লেষণ করে এবং সরেজমিন পরিদর্শন করে মৌজা, দাগ বা অন্য কোন চিহ্ন বা সীমারেখা দ্বারা ‘ভূমি জোনিং ম্যাপ’ প্রণয়ন কবরে। অধ্যাদেশে মোট ১৮ টি ভূমির জোন করা হয়েছে। সরকারি সংস্থাসমূহ ভূমির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে ভূমি সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে।

তিনি আরও বলেন, কৃষিভূমি শুধু ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্র নয়; এটি পরিবেশের ভারসাম্য, জলাধার সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কৃষিভূমি রক্ষা মানে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা। অনেক ক্ষেত্রে কৃষিভূমি অনুমতি ছাড়াই ভরাট করে বাড়ি, ফ্যাক্টরি বা ইটভাটা তৈরি করা হয়। আইন থাকলে এসব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এই অধ্যাদেশে ইহা প্রতিকারে বিচার ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGS) অর্জনে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা একটি মূল লক্ষ্য। কৃষিভূমি রক্ষায় আইন প্রণয়ন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়ক। একটি কার্যকর কৃষিভূমি সুরক্ষা আইন ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। কৃষিভূমি শুধু বর্তমান প্রজন্মের সম্পদ নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও অধিকার। আইন প্রণয়নই সেই সম্পদ রক্ষার দীর্ঘ মেয়াদি উপায়।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ।