মেরুন গেঞ্জির সেই ব্যক্তি পল্টন থানার ওসির গাড়িচালক
রাজধানীর পল্টনে ফুটপাতে পড়ে থাকা ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাটকে মারছে মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি—এমন ছবি ও ভিডিও গত শুক্রবার রাতে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তবে মেরুন টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছিল না কেউ। অবশেষে জানা গেছে, আখতারুজ্জামান সম্রাটকে বেধড়ক পেটাতে থাকা সেই ব্যক্তি পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের পল্টন থানার ওসি নাসিরুল আমিনের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত।
গতকাল দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পল্টন থানায় ঘুরে অন্তত সাতজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে কালবেলা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে থানার ওসি নাসিরুল আমিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বক্তব্যের জন্য থানায় তার কক্ষে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার সরকারি মোবাইল নম্বরে আটবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান শেখকে জিজ্ঞেস করা হয়, আখতারুজ্জামান সম্রাটকে মারধর করা সেই ব্যক্তি পল্টন থানার ওসির গাড়িচালক কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি। তবে নিশ্চিত নই।’ সন্ধ্যায় পল্টন থানার ডিউটি অফিসারের কাছে জানতে চাওয়া হয় ওসির গাড়িচালকের নাম কী? তিনি বলেন, ‘মিজানুর রহমান।’
এদিকে, গতকাল দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, মেরুন রঙের টি-শার্ট পরা ব্যক্তিটি একজন পুলিশ কনস্টেবল। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘লাল শার্ট পরিহিত ব্যক্তি পুলিশের কনস্টেবল। তার নাম মিজানুর রহমান। তিনি ছাত্রনেতা সম্রাটের ওপর হামলা করেছেন।’
ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার বিকেলে। গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল বিজয়নগর দিয়ে ডলফিন মোড় হয়ে পল্টনের দিকে যাওয়ার সময় পেছন থাকা অংশে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হামলা করে বলে অভিযোগ করেন গণঅধিকার পরিষদ নেতারা। এরপর হামলা প্রতিহত করতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে উভয়পক্ষই সংঘর্ষে জড়ায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে থাকে। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে মাঠে নামে। পরে গণঅধিকার পরিষদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। একপর্যায়ে নুরসহ উপস্থিত নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়। নুরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। সে সময় নুরের পাশে ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট। তিনিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিচার্জে আহত হয়ে ফুটপাতে পড়ে যান। তখন মেরুন রঙের টি-শার্ট পরিহিত পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমান তাকে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি মারতে থাকেন। মারধরের সেই ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন ওঠে, মেরুন রঙের টি-শার্ট পরা ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে।
পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি এবং কোনো মামলাও করা হয়নি। তবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমার জানা মতে, ওই যুবক একজন পুলিশ কনস্টেবল। ঘটনার সময় তিনি ডিউটিতে ছিলেন। বিস্তারিত আপনারা ডিএমপির কাছ থেকে জেনে নেবেন।’
‘পা থেকে মাথা পর্যন্ত পিটাইছে, একজন গুলি করতে চেয়েছিল’: শুক্রবার রাতের ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগী আখতারুজ্জামান সম্রাট গতকাল রাতে কালবেলাকে বলেন, ‘আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। গোল হয়ে ফুটবলের মতো লাথি মেরেছে, লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। একজন কোমর থেকে অস্ত্র বের করে আমার বুকে গুলি করতে চেয়েছিল। পরে অন্য এক পুলিশ তাকে আটকায়। একপর্যায়ে বুকে পা দিয়ে ধরে আমাকে মারছে। গতকাল (গত শুক্রবার) থেকে আমার প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ। প্রস্রাবের রাস্তায় আঘাত লেগেছে।’
এর আগে সন্ধ্যায় সম্রাটের স্ত্রী নিধির কালবেলাকে বলেন, ‘তার (সম্রাট) পুরো শরীরে লাঠির আঘাতের কালশিটে দাগ। ব্যথায় গোঙাচ্ছে। ঘুম ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছুটা ঘুমাতে পারছে। তার মাথায় কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন। এখানে ফুলে আছে। ডাক্তার সিটিস্ক্যান করতে বলেছেন। এ ছাড়া দুই হাতের কবজি ফুলে আছে। বেধড়ক মারধরের কারণে তার কিডনিতেও আঘাত লেগেছে। আঘাতের ধরন বুঝতে ডাক্তার টেস্ট দিয়েছেন।’