ঢাকা, বাংলাদেশ

সিইসিকে ৮ দলের স্মারকলিপি

প্রকাশিত :

নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই জাতীয় সনদের টেকসই আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের আয়োজনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) হুবহু বহাল রাখারও দাবি জানিয়েছে দলগুলো।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনের সভা কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে তারা এ দাবি জানান। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সভা কক্ষে দুপুর ১টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।


বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর সরকার ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ওই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য গণভোটের প্রস্তাব করেছে। আমরা আজ আটটি দলের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি– জুলাই জাতীয় সনদের টেকসই আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হোক।’


তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে চেতনা, ছাত্র-জনতার রক্তের স্বীকৃতি দিতে হবে— সে জন্য জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একদিনে করা যাবে না। কিছু দল এ প্রস্তাব করলেও আমরা আট দল বলেছি— জুলাই সনদের স্বীকৃতির জন্য আগে নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট শেষ করতে হবে।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংশোধিত আরপিও। অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা-উপদেষ্টা পরিষদ যেটি অনুমোদন করেছে, সেটিকে হুবহু বহাল রাখতে হবে। এখানে কোনও কাটাছেঁড়া বা সংশোধনী আনা যাবে না। যেটা মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে, সেটাকেই কার্যকর করে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা জরুরি। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, নারী প্রার্থীদের নির্বাচনি কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে– নোয়াখালী, নওগাঁসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে।’


প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে কোনও আল্টিমেটাম দিয়েছেন কিনা প্রশ্নে আবদুল হালিম বলেন, ‘আজ আমরা কোনও আল্টিমেটাম দেইনি। তবে আমাদের আট দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে– এই স্মারকলিপির পর কয়েক দিন অপেক্ষা করে আগামী ৩ নভেম্বর জাতীয় শীর্ষ নেতারা বসে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সিইসি আমাদের কথা শুনেছেন। দাবি বিবেচনার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকার কথা বলেছেন। যারা জুলাই চেতনার পরিপন্থি কাজে থাকবে তারা জনগণের কাছে নিগৃহীত হবে। জুলাইয়ের প্রেক্ষাপটেই এত আয়োজন। তাই গণভোট আগে না করলে জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।’

এ সময় বৈঠকে আরও ছিলেন– ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালউদ্দিন, বাংলাদেশ নেজাম ইসলামী পার্টির মহাসচিব মুসা বিনী নেজার, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।

এর আগে, সকাল থেকে নির্বাচন ভবনের সামনে আট দলের নেতাকর্মীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ইসি কর্মকর্তাদের। স্মারকলিপি দেওয়ার কথা বলে এসে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানান তারা। সে ক্ষেত্রে দলগুলো আলাদা আলাদাভাবে দেখা করার কথা বলে।

এমন পরিস্থিতিতে একসঙ্গে দলগুলোর কয়েকজন করে প্রতিনিধিকে নির্বাচন ভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পরে ২৫-৩০ জন সদস্য একসঙ্গে বৈঠকে বসেন।