ঢাকা, বাংলাদেশ

জ্ঞানের মূল ভিত্তি আল্লাহর ভয়

প্রকাশিত :

ধর্ম ডেস্ক : ইসলামে জ্ঞান অর্জন কেবল পার্থিব সাফল্যের মাধ্যম নয়, এটি আল্লাহভীতিকে দৃঢ় করারও এক মহান ইবাদত। প্রকৃত জ্ঞান মানুষকে তার স্রষ্টার পরিচয় করায়, নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে শেখায় এবং আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা জাগায়।

কোরআনের দৃষ্টিতে জ্ঞান ও তাকওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহকে ভয় করে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরা।’ (সুরা ফাতির: ২৮)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়, ‘হে ঈমানদাররা! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান (ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি) দান করবেন।’ (সুরা আনফাল: ২৯) তাফসিরবিদরা বলেন, আল্লাহভীতি ছাড়া জ্ঞান অসম্পূর্ণ।

আল্লাহভীতির পার্থিব ও পারলৌকিক পুরস্কার
আল্লাহ তাআলা মুত্তাকিদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন।’ (সুরা তালাক: ৪)

তাকওয়াবিহীন জ্ঞানের ভয়াবহ পরিণতি
রাসুলুল্লাহ (স.) দোয়া করতেন- ‘আমি এমন জ্ঞান থেকে আশ্রয় চাই, যা উপকারে আসে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭২২) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সতর্ক করে বলতেন, ‘যে জ্ঞান আল্লাহভীতি অর্জনে সহায়ক না হয়, তা বোঝাস্বরূপ।’

প্রকৃত জ্ঞানীদের বিনয় ও ভীতির চিত্র
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা প্রকৃত জ্ঞানীদের অবস্থা বর্ণনা করেন- ‘যাদেরকে পূর্বে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তারা যখন কোরআন শোনে, সেজদাবনত হয়ে পড়ে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ১০৭)

সমসাময়িক প্রেক্ষাপট: তাকওয়ার সংকট
আধুনিক যুগে মানুষ প্রচুর তথ্য জানে কিন্তু আল্লাহভীতি থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান দিলেও তাকওয়া শেখায় না। নৈতিকতাবিহীন জ্ঞান ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

করণীয় ও পরামর্শ
প্রতিদিনের জ্ঞানচর্চা শুরু করতে হবে উপকারী জ্ঞান কামনা করে। জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি সালিহ আমলের চর্চা জরুরি। অর্জিত জ্ঞানকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দোয়া আমাদের জন্য অনুসরণীয়- اللَّهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي، وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي، وَزِدْنِي عِلْمًا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মানফা-নি বিমা আল্লামতানি, ওয়া আল্লিমনি মা ইয়ানফাউনি ওয়া জিদনি ইলমা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে তুমি যা শিখিয়েছ, তা দিয়ে আমাকে উপকৃত করো, আমার জন্য যা উপকারী হবে, তা আমাকে শিখিয়ে দাও এবং আমার ইলম (জ্ঞান) বাড়িয়ে দাও।’ (তিরমিজি: ৩৫৯৯; ইবনে মাজাহ: ২৫১)

সারকথা, প্রকৃত জ্ঞানীর পরিচয় হলো আল্লাহভীতির মাধ্যমে জীবনযাপন। জ্ঞানার্জনের মুখ্য উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। ‘রাব্বি জিদনি ইলমা’ (হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন) (সুরা তাহা: ১১৪)। আল্লাহ তাআলা আমাদের অন্তরে তাকওয়ার আলো বিকশিত করুন এবং জ্ঞানকে তাঁর ভয় ও মহব্বতের মাধ্যমে উদ্ভাসিত করুন। আমিন।

মূল বার্তা
‘আল্লাহভীতিই জ্ঞানের প্রকৃত ভিত্তি’—এই মহান সত্যই ইসলামি শিক্ষাদর্শনের কেন্দ্রীয় বিষয়। জ্ঞান তখনই আলোকবর্তিকা, যখন তা মানুষকে আল্লাহমুখী করে এবং তাঁর প্রিয় বান্দায় পরিণত করে।