ঢাকা, বাংলাদেশ

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ইইডির পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশিত :

‎নিজস্ব প্রতিবেদক : অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে ঠিকাদারদের কাজ ও অগ্রিম বিল দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জরজিসুর রহমানসহ ৫ কর্মকর্তা ও ১০ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্য কর্মকর্তারা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পিআরএল ভোগরত) মীর মুয়াজ্জেম হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম মনিরুজ্জামান ও জামিল হোসেন।

গত ২৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব (শৃঙ্খলাবিষয়ক শাখা) মো. আশরাফুল ইসলামের সই করা অফিস আদেশ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

অফিস আদেশে বলা হয়, ইইডির ঢাকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। জানতে চাইলে তদন্ত কার্যক্রম শুরুর কথা নিশ্চিত করেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদী।


এবিষয়ে শনিবার মো. তারেক আনোয়ার জাহেদী বলেন, ‘তদন্ত যেহেতু চলমান, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আর এই অভিযোগগুলো আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগের প্রধান প্রকৌশলীর সময়ের।’

ইইডি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, সংস্কার ও আসবাবপত্র সরবরাহ করে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ, আইসিটি সুবিধা দেওয়ার কাজও করে থাকে অধিদপ্তরটি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সম্প্রতি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রায় ৩২ কোটি টাকার কাজ ইলেকট্রো গ্লোব মিরন এন্টারপ্রাইজকে এবং রূপগঞ্জের পূর্বাচল মাধ্যমিক সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৫ কোটি টাকার কাজ নুরানি কনস্ট্রাকশনকে পাইয়ে দিতে প্রাক্কলিত ব্যয় কমিয়ে তা ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে দরপত্র কমিটির সভাপতি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।


এর বাইরে নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় লালপুর উপজেলাধীন বিলগারি দাখিল মাদ্রাসা, সদর উপজেলার বারঘরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের অগ্রিম বিল দেওয়া এবং রংপুরে ২০ কোটি টাকার দরপত্রে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্তে কোল্ড স্টোরেজ অন্তর্ভুক্ত করারও অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতিতে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, নাটোরে কর্মরত থাকাকালে আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছিল। আর তাঁর সর্বশেষ এসিআরে যা লেখা ছিল, তাতে তাঁর পদোন্নতি হওয়ার কথা না। কারণ, তাঁর এসিআরে বিরূপ মন্তব্য ছিল। এসিআরটি যাচাই করলে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যাবে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ইইডি থেকে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়। এর অংশ হিসেবে আগামী সোমবার বিকেলে পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শুনানির জন্য ডেকেছেন।

তবে ইইডির প্রধান কার্যালয়ের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক কর্মকর্তা। তাঁদের ভাষ্য, প্রধান দুই অভিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান ও নির্বাহী প্রকৌশলী জরজিসুর রহমান প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত থেকে তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা ও ইইডির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মামুনুর রশিদ ও জরজিসুর রহমানের গ্রামের বাড়ি একই জেলা এবং তাঁরা পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তদন্তের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জরজিসুর রহমান বলেন, এখানে প্রভাব বিস্তার করার কী আছে?

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) সাইদুর রহমান বলেন, ‘ইইডির তদন্ত কার্যক্রমের ওপর আমাদের নজরদারি থাকবে। এ ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি বা অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।’