আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। শুধু তাই নয়, অবিলম্বে আফ্রিকান দেশটিকে মার্কিন অর্থ প্রদানও বন্ধ করা হবে। নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এই ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে ফ্লোরিডার ডোরালে অবস্থিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের গলফ রিসোর্টে ওই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমার নির্দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা আগামী বছর ফ্লোরিডার গ্রেট সিটি অফ মিয়ামিতে আয়োজিত জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার আচরণ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে, তারা কোথাও সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্য দেশ নয়। আমরা তাদের জন্য সমস্ত অর্থ প্রদান এবং ভর্তুকি বন্ধ করতে যাচ্ছি। অবিলম্বে তা কার্যকর করা হবে।’

জি-২০ জোট বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোট। জোটটির শীর্ষ সম্মেলন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাদ দেওয়া একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ। এটা বাস্তবায়ন হলে জোটটির ২০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দেশকে সম্মেলন থেকে সরাসরি বাদ দেওয়া হবে।


দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ‘দুঃখজনক’। এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা একটি সার্বভৌম সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক দেশ। বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে আমরা সম্মান করি না।’

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া সিএনএনকে বলেন, তারা ট্রাম্পের ঘোষণাটি জানতে পেরেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না আসলে আমরা এটিকে কেবল জল্পনা হিসাবেই ধরে নেব।

শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ এনে ট্রাম্প গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সাহায্য স্থগিত করেছিলেন। তবে নতুন ঘোষণায় কোন কোনো খাতে অর্থ প্রদান বন্ধ করা হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে- এমন অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র গত ২২-২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মেলন বয়কট করেছিল।

সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাচ্ছে পোল্যান্ড
একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৬ সালের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পোল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছে। পোল্যান্ডের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্যারল নওরোকির সঙ্গে ট্রাম্পের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি জি-২০ জোটে সদস্য পদ চাইছে অনেকদিন ধরে। গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার পর নওরোকি বলেছিলেন, ট্রাম্প তাকে ২০২৬ সালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পোল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী গত মাসে জানান, ৩৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে পোল্যান্ড। তাছাড়া বিশ্বের বিংশতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমরা জি-২০ জোটে যোগ দিতে চাই। এই দাবি ন্যায্য।

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে টানাপোড়েন
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। গত মার্চ মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। তাকে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে।

দক্ষিণ আফ্রিকা চলতি মাসের শুরুতে জি-২০ জোটের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শেষ করে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে। জোহানেসবার্গের শীর্ষ সম্মেলনে পরবর্তী জোট প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় কোনো উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।

ট্রাম্প জানান, মার্কিন দূতাবাসের একজন সিনিয়র প্রতিনিধির কাছে জোটের সভাপতিত্ব হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও আমাদের প্রতিনিধি সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।