ঐশ্বরিয়া রায়: অভিনয় ও অতুলনীয় সৌন্দর্য মিলে যেন এক আভিজাত্য!
যুগশঙ্খ ডেস্ক : কয়েক দশক ধরে ঐশ্বরিয়া রায় এক বিশ্ব আইকন হিসেবে রাজত্ব করেছেন। অতুলনীয় সৌন্দর্যের জন্য যেমন প্রশংসিত হয়েছেন তেমনি অভিনয়েও সমানভাবে সমাদৃত হয়েছেন তিনি। শুধুমাত্র স্টাইল আইকন হিসেবেই নয় অসাধারণ অভিনেত্রী হিসেবে পর্দায় তুলে ধরেছেন গভীর আবেগ ও শক্তিশালী অভিনয়। তার অভিনয়জীবন; এক কথায় বহুমুখী ও এক অনন্য যাত্রা।
মহাকাব্যিক প্রেমের গল্প ও জ্বালাময়ী প্রেমিকা থেকে শুরু করে নিঃশব্দ বেদনার মর্যাদাপূর্ণ প্রতিমূর্তির যেকোনো চরিত্রকে তিনি ছাপিয়ে গেছেন। সৌন্দর্যে আলোড়ন তোলা এই নায়িকার আজকে বিশেষ দিন— জন্মদিন। দিনটিতে ফিরে দেখা যাক; তার অসামান্য অভিনয় যা চিরকাল তাকে সত্যিকারের শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে ।
হাম দিল দে চুকে সানাম : এই চলচ্চিত্রই ঐশ্বরিয়াকে শক্তিশালী অভিনেত্রীর আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। সঞ্জয় লীলা ভানসালির এই মহাকাব্যিক প্রেমকাহিনীতে তিনি নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সালমান খান ও অজয় দেবগনের সঙ্গে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছিল দর্শককে। আবেগে ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর নন্দিনী চরিত্রটিতে যেমন শিশুসুলভ খেয়ালিপনা ছিল। তেমনি হৃদয়বিদারক যন্ত্রণাও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। উচ্ছ্বাসী প্রেমিকা থেকে কর্তব্যপরায়ণা স্ত্রীর পথচলায় নন্দিনী রূপে তিনি যেন প্রাণ হয়ে উঠেছিলেন। ছবিটিতে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর ক্যাটাগরিতে প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান।
দেবদাস : যদি ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ আগুনের স্ফুলিঙ্গ হয় তবে ‘দেবদাস’ সেই আগুনের শিখা। গর্বিত ও অনমনীয় পার্বতী (পারো) চরিত্রে অভিনয় করে ঐশ্বরিয়া জয় করেছিলেন দর্শকদের মন। দেবদাসের যন্ত্রণা ও তীব্র ভালোবাসার সামনে তিনি ছিলেন দৃঢ়। তার নীরব মর্যাদা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও নিঃশব্দ বেদনা যেন কথা বলত নিজেই। বিশেষ করে বিখ্যাত ‘দোলা রে দোলা’ গানে তার উপস্থিতি ছিল মুগ্ধকর। এই অভিনয় তাকে এনে দেয় দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।
চোখের বালি : ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত এই অসাধারণ ছবিতে ঐশ্বরিয়া তার গ্ল্যামারাস ব্যক্তিত্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে এসে বিনোদিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি এবং রাইমা সেনের সাথে অভিনয় করা এই বাংলা ছবিটি ছিল একটি অন্যতম শৈল্পিক সৃষ্টি। ঐশ্বরিয়া বিধবা বিনোদিনী চরিত্রের অনুভূতিগুলো- নিষিদ্ধ আকাঙ্ক্ষা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং গভীর হতাশাকে অত্যন্ত সূক্ষ্মতার সাথে প্রকাশ করেছেন। এটি ছিল একটি সাহসী চরিত্র যা তার অসাধারণ বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে।
রেইনকোট : সব গ্ল্যামার ত্যাগ করে ঐশ্বরিয়া 'রেইনকোট'-এ তার সবচেয়ে সূক্ষ্ম এবং শক্তিশালী অভিনয় করেন। অজয় দেবগনের বিপরীতে নীরজা চরিত্রে তিনি হৃদয়বিদারকভাবে বাস্তব ছিলেন। তৃপ্তির আড়ালে নির্জন বাস্তবতা লুকিয়ে রেখেছিলেন। পুরো ছবিটি নীরব অভিব্যক্তি এবং প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে ভাগ করা অব্যক্ত কথার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত এই ছবিতে একজন অভিনেত্রী হিসেবে তার অসীম সাহসিকতা প্রমাণিত হয়েছে। যা দেখিয়েছে যে তার আসল শক্তি ঐশ্বর্যের মধ্যে নয় বরং কাঁচা, দুর্বল এবং ন্যূনতম অভিনয়ের মধ্যে নিহিত।
যোধা আকবর : ছবিটিতে ঐশ্বরিয়া রানি যোধা বাঈকে ‘নিখুঁতভাবে রূপ’ দিয়েছেন। আশুতোষ গোয়ারিকরের মহাকাব্যে, যেখানে হৃতিক রোশনের বিপরীতে অভিনয় তিনি কেবল একজন সুন্দরী রাজকন্যা ছিলেন না বরং একজন দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন, বুদ্ধিমতী মহিলা ছিলেন। যিনি একজন সম্রাটের বিপরীতে নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতেন। যোধার শান্ত দৃঢ় সংকল্প, রাজনৈতিক মন এবং শেষ পর্যন্ত আকবরের প্রতি ভালোবাসার দৃশ্য ছিলো সবচেয়ে মোহনীয়। ছবিটি তার জাঁকজমকপূর্ণ অভিনয়গুলির মধ্যে একটি ।
গুজারিশ : জাদুকর হৃতিক রোশনের নিবেদিতপ্রাণ নার্স সোফিয়া ডি'সুজা হিসেবে ঐশ্বরিয়া ছিলেন ছবির নীরব, স্পন্দিত হৃদয়। তিনি খুব সুন্দরভাবে সোফিয়ার কঠোর বহিঃপ্রকাশকে ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগের সাথে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। বছরের পর বছর ভাগ করে নেয়া ব্যথা , নীরব ভালোবাসার ওপর নির্মিত জটিল সম্পর্ক সঞ্জয় লীলা ভানসালির অনন্য সৃষ্টি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া