ঢাকা, বাংলাদেশ

হঠাৎ বৃষ্টিতে ক্ষেতে জমেছে পানি, ধান ও সবজিচাষীদের মাথায় হাত

প্রকাশিত :

যুগশঙ্খ ডেস্ক : গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে আগাম আলু চাষ শুরু করেছেন নওগাঁর কৃষকরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমেছে। এতে আলুসহ রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যেসব জমিতে আগাম আলু বপণ করা হয়েছে, সেখানে পানি জমায় রোপণ করা আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও জমি প্রস্তুত করা হয়েছিল, কোথাও সদ্য বীজ রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমেছে। ফসল বাঁচাতে কৃষকরা পানি সরানোর চেষ্টা করছেন।

শুধু আলু খেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব খেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় কৃষকরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া মাঠের আধা-পাকা ধানও হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আলুর ভালো দাম না পাওয়ায় এ বছর ভালো লাভের আশায় আগাম আলু চাষ শুরু করেছেন তারা। তবে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমে। ফলে রোপণ করা বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

অন্যদিকে, অনাবাদী জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি দ্রুত না সরলে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক জয়নাল বলেন, ‘গত বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছিল। ভাবলাম একটু আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করেছি। এক সপ্তাহ হয়নি, এদিকে বৃষ্টি। এখন জমিতে পানি জমে আছে, গাছ ঠিক মতো উঠতে নাও পারে। কি করব ভাবতেই পারছি না।’

মান্দা উপজেলার ভারশো এলাকার কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজন আলু লাগাচ্ছে দেখে আমিও এক বিঘা জমিতে কিছু দিন আগে লাগালাম। কয়েকদিনের থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আলুর জমিতে পানি জমেছে। এতে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’

হাপানিয়া এলাকার সুশীল মিস্ত্রি বলেন, ‘ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমন ধানের গাছ মাটিতে হেলে গেছে। এখনো ফসলের অনেক খেতে পানি জমে রয়েছে। দ্রুত পানি সরাতে না পারলে অনেক ক্ষতি হবে।’

কীর্ত্তিপুর এলাকার সবজি চাষি ইন্দ্রি মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ফুলকপি সহ বিভিন্ন সবজির গাছের গোড়ায় পচন দেখা দিয়েছে। অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকরা খরচের টাকাও তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোমায়রা মন্ডল বলেন, বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। যেসব জমিতে আলু লাগানো হয়েছে ৮-১০ দিন হয়ে গেছে, সেগুলোতে ক্ষতি হবে না। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। ধানের জন্য বৃষ্টি কিছুটা আর্শীবাদ। খেত থেকে পানি সরে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।
সূত্র : ইউএনবি