ঢাকা, বাংলাদেশ

বায়ুদূষণে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা দিল্লির, ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

প্রকাশিত :

নিজস্ব প্রতিবেদক : শীতের শুষ্ক মৌসুম এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিন্তু বর্ষা পেরোতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহর বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষ স্থান নিয়ে আছে। এর মধ্যে ভারতের দিল্লির অবস্থা বেশ কয়েক দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ। অন্যদিকে ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৭৫। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ ঢাকার অবস্থান পঞ্চম।

অন্যদিকে শীর্ষ অবস্থানে থাকা দিল্লির একিউআই স্কোর ৫১৯। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।


বায়ুদূষণ: বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এক অদৃশ্য বিপদবায়ুদূষণ: বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এক অদৃশ্য বিপদ
বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো—

(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র‍্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (২৫০, খুব অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা (২০১, খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইরাকের বাগদাদ (১৮০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।


বায়ুদূষণ সোরিয়াসিসসহ চর্মরোগের জন্য হতে পারে মারাত্মক: গবেষণাবায়ুদূষণ সোরিয়াসিসসহ চর্মরোগের জন্য হতে পারে মারাত্মক: গবেষণা
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:

৬. হ্যানয়, ভিয়েতনাম (১৭৫)

৭. উহান, চীন (১৭০)

৮. কুয়েত সিটি, কুয়েত (১৬২)

৯. মানামা, বাহরাইন (১৬০)

১০. মুম্বাই, ভারত (১৫৮)

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।