জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হবে না: জামায়াত আমির
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০২৬ সালে জাতীয় নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর এর জন্যই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আমরা ভদ্র ভাষায় বলছি এবং বলবোই। তবে দাবি আদায়ের ব্যাপারে হিমালয়ের মতো অটুট থাকবো। কারণ এটি বিপ্লবের দাবি। ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনও জাতীয় নির্বাচন হবে না।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর পল্টনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আট দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দুপুর ২টায় শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশ মঞ্চের আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশের বিস্তৃতি পশ্চিমে জাতীয় প্রেসক্লাব, পূর্বে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট, উত্তরে কাকরাইল মোড় ও দক্ষিণে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির আমির সারোয়ার কামাল আজিজী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক চান।
জামায়াতের আমির বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের দুর্বার আন্দোলন চলবে। তাই সরকারকে জনগণের ভাষা বুঝে আগে গণভোট দিতে হবে। গণভোট আর জুলাই সনদের গোড়াপত্তন কখন হবে মানুষ জানতে চায়। এ ব্যাপারে মুক্তিকামী জনগণসহ বেশির ভাগ মানুষ একমত। তিনি প্রশ্ন রাখেন—তাহলে গণভোটের তারিখ নিয়ে এত বায়নাবাজি কেন?
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ বিষয়ে একমত হয়েই তো আমরা সনদে স্বাক্ষর করেছি। তখন গণভোট আগে হওয়াই তো যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়েই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে। হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। তখন আর কোনও সন্দেহ ও সংশয় থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হোক। এ নিয়ে কেউ ধূম্রজাল সৃষ্টি করবেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, কেউ কেউ ঐকমত্য কমিশনে এক হয়েও জুলাই সনদকে অশ্রদ্ধা করছেন। তাহলে তারা গণতন্ত্রের প্রতি কীভাবে শ্রদ্ধা দেখাবেন?
তাদের প্রতি অনুরোধ, জনগণের ভাষা কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। অন্যথায় নিজেদের পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে আইনি ভিত্তি দেয়ার ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছেন। এখন গণভোট আগে না হলে জাতীয় নির্বাচন করবেন কোন আইনে? গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পেলেই জাতীয় নির্বাচনও আইনি ভিত্তি পাবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ভারতে পালাতে পেরেছে। নতুন করে যারা ফ্যাসিবাদী হতে চাইছেন তারা পালাবেন কোথায়? বঙ্গোপসাগরে যাওয়া ছাড়া তাদের যাওয়ার উপায় নেই।
বিএনপির কথায় একই দিনে গণভোট দেয়ার পাঁয়তারা যারা করছেন, তাদের মতলব জনগণ জানেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ বাহাত্তরের সংবিধান, আর অন্যপক্ষ জুলাইয়ের পক্ষে। তাই আমাদের সবাইকে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ১৩ নভেম্বর কেউ নামতে চাইলে তাদের রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে।
জুলাই সনদকে কোনও কাগজের সনদ হিসেবে দেখতে চাই না। তাই সরকারের আদেশে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে জনগণ মানবে না। জুলাই চেতনার বাইরে বাংলার মাটিতে অন্য কিছু বাস্তবায়ন হতে দেবো না।
খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেন, নির্বাচনের আগেই গণভোট করতে হবে। এটা দেশের সর্বস্তরের মানুষের দাবি। এটি নভেম্বরের মধ্যেই করতে হবে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির আমির অধ্যক্ষ সারোয়ার কামাল আজিজী বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে পাঁচ দফা দাবি আদায় করবো। এতে ইসলামি সরকার গঠন হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি বলেন, আগামী সরকার যেন ইসলামি হয়। তিনি বলেন, গণভোট এ দেশে নতুন কিছু নয়। একটি দলেরও জন্ম হয়েছে গণভোটের মাধ্যমে। তাই গণভোট নিয়ে তাদের ভয় পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, একটি দল, যাদের জন্ম গণভোটের মাধ্যমে, তারা আজ গণভোটে রাজি হচ্ছে না। তারা জনগণের চাপে মানলেও জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চাচ্ছে। আমরা এর মাধ্যমে জুলাই সনদকে অপমান হতে দেবো না। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, বিগত দিনে মজলুম ছিলেন, তাই নতুন করে জালেম হবেন না।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক চান বলেন, একটি দল জুলাই সনদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনগণের মন থেকে উঠে গেছে। আপনারা মানুষের ভাষা না বুঝলে জনগণ আপনাদের ছাড়বে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হাক্কানী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন।