সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

১৬৪৭

ঢাকা মহানগর আ.লীগের নেতৃত্বে আসছেন যাঁরা

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০১৯  

সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবউল্লাহ হিরু, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ওমর বিন আব্দাল আজিজ তামিম (ওপরে বাঁ থেকে) এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান ও এস এ মান্নান কচি, দপ্তর সম্পাদক এম. সাইফুল্লাহ সাইফুল (নিচে বাঁ থেকে)। ছবি : সংগৃহীত

আগামীকাল শনিবার হতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে এ দুটি সুপার ইউনিটের সম্মেলন। শেষ পর্যায়ের দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত পদপ্রত্যাশীরা।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কার্যক্রমে সন্তষ্ট নয় দলের হাইকমান্ড। এ কারণে ইউনিট দুটিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নতুন মুখ আসবে বলে ধারণা করছেন সবাই। আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রাম ও রাজনীতির ময়দান সরব রাখতে ইউনিট দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তবে বর্তমান নেতৃত্ব সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। এবার সামনে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পারিবারিক ইতিহাসওয়ালা ত্যাগী নেতারা। এরই মধ্যে খোঁজ-খবর নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সজাগ দৃষ্টি, যাতে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি দুটি ইউনিটের নেতৃত্বে না আসতে পারে।

দলীয় সূত্র বলছে, সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব বাছাইয়ের ধারাবাহিকতা থাকছে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মূল্যায়ন করার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। এদিন বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ঢাকার দুই মহানগরের নতুন শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, মহানগরের নেতৃত্ব বাছাইয়ে ক্ষেত্রে বড় ধরনের ফিল্টারিংয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত। নেতা কতটা কর্মীবান্ধব, সাংগঠনিকভাবে ঋদ্ধ, স্বচ্ছ ইমেজধারী ও ত্যাগী, এসব বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে চলমান শুদ্ধি অভিযানের বড় প্রভাব লক্ষ করা গেছে। কমিটিতে স্থান পেয়েছেন পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ধারকরা। সেই সূত্রে এবার মহানগরেও ত্যাগী, পরীক্ষিত ও স্বচ্ছ ইমেজের নেতারা পদ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর দক্ষিণ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

মহানগর দক্ষিণ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগরের শীর্ষ দুই পদের দায়িত্বে ছিলেন প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ (সভাপতি) এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম (সাধারণ সম্পাদক)। তাঁরা নেতৃত্বে ছিলেন প্রায় ২৯ বছর। এই সময়ে ওই পদে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা যায়নি। যে কারণে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন অনেক যোগ্য নেতৃত্বও।

দীর্ঘ মেয়াদে পদ আটকে থাকার কারণে মহানগরে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেনি। মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্বের মতো বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড শাখায়ও দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি। নেতাদের পদ আঁকড়ে থাকার মানসিকতায় সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ আর বিভেদ। এবার মহানগর উত্তর-দক্ষিণের চমকজাগানিয়া কমিটি দিয়ে মহানগরকে ঢেলে সাজাতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্র বলছে, আগামী জানুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে পরিকল্পনামাফিক কমিটি করবে আওয়ামী লীগ। সিটি করপোরেশনের জন্য প্রার্থী রেখে মহানগরে প্রবীণ-নবীনের মেলবন্ধনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে দায়িত্বে আনবেন শেখ হাসিনা।

মহানগরের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে ‘যোগ্য প্রার্থী’দের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনিই শেষ সিদ্ধান্ত দেবেন। সে ক্ষেত্রে রাজনীতিতে সভাপতি পদে দীর্ঘদিনের রাজনীতির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজনকে বেছে নেওয়া হতে পারে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা মহানগরের কোনো থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে উঠিয়ে এনে মহানগরের দায়িত্ব দিতে পারেন, যে বয়সে তরুণ এবং ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। এর আগের কমিটিতেও এইভাবে নেতৃত্ব এসেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে ও পদ ধরে রাখতে বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছেন নেতারা। আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবউল্লাহ হিরু। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ ছাড়া আলোচনায় আছেন নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণে নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা আছে। আলোচনায় আছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ। আলোচনায় আছেন ভাষাসৈনিক পিয়ারু সরদারের নাতি মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের ছেলে মহানগর দক্ষিণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ওমর বিন আব্দাল আজিজ তামিম।

তবে মহানগর দক্ষিণের বর্তমান সভাপতি আবুল হাসনাত আবারও একই পদে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ পদোন্নতি না পেলেও মহানগরের একই পদে থাকার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘এবার নেতৃত্ব বাছাইয়ের সম্মেলনগুলো কিন্তু গতানুগতিক ধারায় হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে একটা চমকজাগানিয়া পরিবর্তন এবং তারুণ‌্যনির্ভর পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসছেন। এ জন্য আমি আশাবাদী। নেত্রী অবশ্যই যোগ্য ও ত্যাগী নেতৃত্ব আনবেন এবার মহানগরের সম্মেলনে।

গাজী আবু সাঈদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন যেখানে দায়িত্ব দিয়েছেন, বুক চিতিয়ে দলের জন্য কাজ করেছি। এক-এগারোতে পুরান ঢাকায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি। নেত্রী ছাড়া আমি কিছু বুঝি না। এখন সূত্রাপুর থানার দায়ি‌ত্ব দি‌য়ে‌ছেন নেত্রী। সেই দায়িত্ব নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী পালন করছি। ‌তি‌নি যেখানেই দায়িত্ব দে‌বেন জীবন বাজি রেখে সেই দায়িত্ব পালন করব।

মহানগর উত্তর

এদিকে আসন্ন সম্মেলনে উত্তরের সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান ও এসএ মান্নান কচি, সাংগঠনিক সম্পাদক মোক্তার সরদার ও জহিরুল হক জিল্লু এবং দপ্তর সম্পাদক এম. সাইফুল্লাহ সাইফুল। এর বাইরেও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশারও মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল বলেন, ‘একটি সফল সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে।’ তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। সব সময় দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে আসছি। নেত্রী দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করবেন, এটা প্রত্যাশা করি।’

নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও উত্তর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বচ্ছ, ক্লিন ইমেজ ও বিতর্কমুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন নেতারাই উত্তর আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আসবেন।’

এরই মধ্যে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খানকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।

নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন নেতাদের যে জয়জয়কার শুরু হয়েছে, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। নেতৃত্ব অভিজ্ঞতার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি তারুণ‌্য দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যারা কোনো ধরনের বিতর্কিত নয়, যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারাই মহানগর আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে আসবেন।

এই বিভাগের আরো খবর

© সকল স্বত্ব www.jugoshankho.com কর্তৃক ® সংরক্ষিত