সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

১৪৫৫

শরীরে ট্যাটু আঁকা হারাম

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৯  

মানুষের শরীরের চামড়ায় মোট সাতটি স্তর থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্তরের চামড়ায় সুঁই বা এজাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করাকে উল্কি বা ট্যাটু বলে। বর্তমান বিশ্বে এক শ্রেণির মানুষের কাছে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে কিছু কিছু বিপথগামী তরুণ-তরুণী পশ্চিমা এই আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। তাই শরীরের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি মুখ, কানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানেও ট্যাটু করতে দ্বিধা বোধ করছে না তারা।

১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেলেও এর প্রচলন শুরু হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৭০ অব্দের দিকে। সম্প্রতি জার্মানির একটি জরিপে উঠে এসেছে, ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের গায়ে ট্যাটু আঁকা আছে। কিছু অবুঝ লোক আবার কলেমাসহ কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বাণী ট্যাটু আকারে এঁকে এটাকে জায়েজ বানাতে চাইছে। ১৮৯১ সালে স্যামুয়েল ও রেলি প্রথম ইলেকট্রিক ট্যাটু মেশিন আবিষ্কার করেন। তাঁর তৈরি ট্যাটু গানের সম্মুখে কলমের মতো সুঁই যুক্ত করা হয় এবং এতে কালি জমা থাকারও ব্যবস্থা ছিল। এ যুগের বেশির ভাগ উল্কি-ট্যাটু আঁকা হয় সে রকম মেশিনেই।

এখনকার ট্যাটু গান মেশিনগুলো দেখতে অনেকটা ডেন্টিস্টের ড্রিল মেশিনের মতো। একটি ট্যাটু গান প্রতি মিনিটে তিন হাজারবার স্কিনের এক মিলিমিটার পর্যন্ত ছিদ্র করে কালি ভরাট করে থাকে। এর মাথায় রয়েছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম সুঁই। সুঁইয়ের মাথায় থাকে রং। প্রতিবার সুঁইকে যখন চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করানো হয়, সেই সঙ্গে রংও ভেতরে প্রবেশ করে। রঙের পরিমাণ এক মিলিলিটারেরও কম হয়। চামড়ার যে স্তরে রংটি লাগানো হয় তার নাম ডের্মিস। এই স্তরে যেকোনো রং প্রবেশ করলে তা সারা জীবন থেকে যায়। পাশাপাশি রঙের সঙ্গে থাকা রাসায়নিকও শরীরের মধ্যে থেকে যায় সারা জীবন। এর ফলে হেপাটাইটিস, টিউবারকিউলোসিস, টিটেনাসের মতো বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা আছে।

মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কৃত্রিমভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ ও গর্হিত। শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা বেশির ভাগ ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে হারাম

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে।’ (সুরা ত্বিন,   আয়াত : ৪) মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কৃত্রিমভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ ও গর্হিত। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা বেশির ভাগ ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে হারাম। তাঁরা বলেছেন, যেসব উপায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট অঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়, তার সবই নিষিদ্ধ। আলাদা চুল লাগানো, ভ্রু প্লাক করা, চোখে আলাদা পালক লাগানো ইত্যাদি ইসলাম অনুমোদন করে না।। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যেসব নারী সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে এবং যেসব নারী ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহ তাআলা তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৪)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, যেসব নারী নকল চুল ব্যবহার করে, যারা অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয় এবং যেসব নারী উল্কি অঙ্কন করে ও যাদের জন্য করে, রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৯৮, মুসলিম, হাদিস : ৫৬৯৩)

হাদিস শরিফে নারীদের নির্দিষ্ট করে বলার কারণ হলো, আগেকার যুগে নারীরাই বেশি উল্কি অঙ্কন করাত। বর্তমান বিশ্বেও উল্কি অঙ্কনে নারীদের হার বেশি। সমীক্ষায় পাওয়া যায়, বিশ্বের ৫৮ শতাংশ নারীর শরীরে অন্তত একটি ট্যাটু বিদ্যমান, সে তুলনায় পুরুষের ৪১ শতাংশ। আর এর পথ ধরে অশ্লীলতা চর্চার খবরও দেশ-বিদেশে বের হয়েছে। বর্তমানে তুরস্ক, ইরান ও আরব আমিরাতে উল্কি আঁকানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

© সকল স্বত্ব www.jugoshankho.com কর্তৃক ® সংরক্ষিত