সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

৬৬

হম্বিতম্বি করেও পিছিয়ে গেল প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২৪  

বিশেষ প্রতিবেদক : সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও যাদের দোষে হাজারও কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি, তাদের শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে এসেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এখন বলছে, যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত না দিলে রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর ইস্কাটনে মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান। গত ২ জুন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘তদন্ত করা হবে। আমরা জানি রিক্রুটিং এজেন্সি। এর মালিক এমপি না কে, জানি না। এমপি চিনি না, দায়ী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বাংলাদেশের চার এমপির রিক্রুটিং এজেন্সিসহ সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পাওয়া ১০০ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর কাজ পেয়েছিল। সরকার মালয়েশিয়ার অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও কর্মীদের কাছ থেকে সাড়ে চার থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে, এক এজেন্সির কর্মী আরেকজন পাঠিয়েছে। এতে ঘাটে ঘাটে টাকা গেছে কর্মীর। নথিবিহীন এসব লেনদেনের কর্মীরা পুরো টাকা ফেরত পাবেন কি না সংশয় রয়েছে। 

প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যত টাকা দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে, তত টাকাই ফেরত দিতে হবে।
 
গত ৩১ মে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। ওইদিন পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৭২৯ জনকে ছাড়পত্র দেয়। তাদের ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫২ জন মালয়েশিয়া গিয়েছেন। কয়েকগুণ দাম দিয়েও উড়োজাহাজের টিকিট না পেয়ে শেষ সময়ে হাজারও কর্মী ভিড় করেন বিমানবন্দরে। প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ১৭ হাজার ৭৭৭ জন যেতে পারেননি। তদন্ত কমিটির কাছে ২ হাজার ২৫ কর্মী তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ জানিয়েছেন। 

দেড় লাখ টাকায় ভিসা ‘কিনে’ এবং সিন্ডিকেটকে কর্মী প্রতি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত ২ জুন গঠিত তদন্ত কমিটি একই মাসের ২৪ তারিখ প্রতিবেদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ১১ দিন আগে প্রতিবেদন পেলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। 

কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রশ্নে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সঙ্গে ৩ জুলাই বৈঠক হয়েছে। তারা একমত হয়েছেন যে, যেসব কর্মী যেতে পারেননি তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। বায়রা ১৫ দিন সময় চেয়েছে। বায়রাকে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে। নাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কর্মীরা যেতে না পারায় কারা দায়ী, তা স্পষ্ট করতে পারেনি। প্রতিবেদন নিজের কাছে রেখেছে মন্ত্রণালয়। দেয়নি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকেও। গত ২ জুলাই স্থায়ী কমিটির সভায় বলা হয়, তদন্ত কমিটির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। 

১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির কতগুলো দায়ী- প্রশ্নে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রত্যেকেরই কয়েকজন করে কর্মী যেতে পারেনি। আমাদের সবারই কম বেশি দায় রয়েছে।'

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকে জমি, গবাদি পশু বিক্রি করে টাকা দিয়েও যেতে পারেনি, যা দুঃখজনক। ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা যেনো সমুদয় টাকা ফেরত পান। এটাই আমাদের প্রধান কাজ। এজেন্সির কাছ থেকে কর্মীকে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি বায়রা তত্ত্বাবধান করবে। কোনো এজেন্সি টাকা ফেরতে অসহযোগিতা করলে বায়রা মন্ত্রণালয়কে জানাবে। মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। 

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে চলতি মাসের শেষ দিকে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে বলে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেছেন. আবার বাজার খুললে যারা যেতে পারেনি তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরো খবর

© সকল স্বত্ব www.jugoshankho.com কর্তৃক ® সংরক্ষিত