গাজাকে দুই ভাগ করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি হবে ‘গ্রীন জোন’, যেটি নিয়ন্ত্রেণ করবে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক সামরিক বাহিনী। এ অঞ্চলটির পুনর্গঠন শুরু হবে। আর অন্যটি হবে ‘রেড জোন’, যা ধ্বংসস্তূপ হিসেবেই থেকে যাবে
গাজাকে দীর্ঘমেয়াদে দুই ভাগ করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে একটি হবে ‘গ্রীন জোন’, যেটি নিয়ন্ত্রেণ করবে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক সামরিক বাহিনী। এ অঞ্চলটির পুনর্গঠন শুরু হবে। আর অন্যটি হবে ‘রেড জোন’, যা ধ্বংসস্তূপ হিসেবেই থেকে যাবে।
মার্কিন সামরিক পরিকল্পনার নথি ও সে পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গাজার পূর্বাঞ্চলে প্রথমদিকে বিদেশি বাহিনী ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে যৌথভাবে মোতায়েন হবে। ফলে বিধ্বস্ত উপকূলীয় ভূখণ্ডটি বর্তমান ইসরায়েলি-নিয়ন্ত্রিত ‘হলুদ রেখা’ দ্বারা কার্যত বিভক্তই থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আদর্শভাবে চাইলে পুরো এলাকা একত্রিত করতে পারতাম, কিন্তু সেটা এখন কেবলই আকাঙ্ক্ষা। এতে সময় লাগবে এবং এটি মোটেও সহজ হবে না।’
গাজার ভবিষ্যত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যা প্রমাণ করে অঞ্চলটির জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের সমাধান অনিয়ন্ত্রিত ও অস্থির। এরইমধ্যে অঞ্চলটির ২০ লাখ বাসিন্দার খাদ্য ও আশ্রয় সরবরাহসহ পুনর্গঠন পরিকল্পনার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাতিল হয়েছে।
গত কয়েকসপ্তাহ ধরে গাজায় ‘বিকল্প নিরাপদ সম্প্রদায়’ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রচার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় ফিলিস্তিনিদের ছোট ছোট গোষ্ঠীর জন্য বেড়া-ঘেরা বা সীমিত এলাকা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে এ সপ্তাহে এ পরিকল্পনাটিও বাতিল হয়েছে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী বা আইএসএফ গঠন করা হবে। তবে এ বাহিনীকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিতে সবার আগে প্রয়োজন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া রেজোলিউশন। সেটি পাশ হলে, কোন দেশ কত সেনা পাঠাবে, তাদের দায়িত্ব কি হবে এসব নির্ধারণ করা হবে। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, গাজায় সেনা মোতায়েন বা পুনর্গঠনের ব্যয় যুক্তরাষ্ট্র বহন করবে না।
গার্ডিয়ানের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে আইএসএফ নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে মার্কিন সেন্টকম কমান্ড। এতে ইউরোপীয় বাহিনীকে মূল শক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। নথি অনুযায়ী: যুক্তরাজ্য থেকে আইএসএফ-এ যোগ দেবে ১,৫০০ পদাতিক সৈন্য (বোমা নিষ্কাশন ও সামরিক চিকিৎসা দক্ষতা সম্পন্ন), ফ্রান্স থেকে ১,০০০ সৈন্য (রাস্তা নিরাপত্তা ও ক্লিয়ারেন্স) আর জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও নর্ডিক দেশগুলোর সৈন্য ফিল্ড হাসপাতাল, লজিস্টিকস ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত হবে। জর্ডানকেও সম্ভাব্য সহায়ক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে স্পষ্টভাবে সেনা পাঠাতে অস্বীকার করেছেন কিং আবদুল্লাহ।
তবে এ পরিকল্পনাকে ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। তাদের মতে, ইরাক ও আফগানিস্তানের দীর্ঘ মিশনের পর খুব কম ইউরোপীয় দেশই তাদের সৈন্যদের জীবন গাজায় ঝুঁকিতে রাখতে রাজি হবেন।
মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আইএসএফ শুধুমাত্র ‘সবুজ অঞ্চল’-এ মোতায়েন থাকবে । গাজার পশ্চিমাংশের ‘ইয়েলো লাইন’-এর বাইরে যেখানে হামাস পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে সেখানে এ বাহিনী কাজ করবে না।