ঢাকা, বাংলাদেশ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: বর্তমান ফ্রন্টলাইনের ভিত্তিতে শান্তি আলোচনা চায় ইইউ

প্রকাশিত :

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপীয় নেতারা মঙ্গলবার বলেছেন, ইউক্রেনের বর্তমান ফ্রন্টলাইনকে কেন্দ্র করেই শান্তি আলোচনার সূচনা হওয়া উচিত। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাবিত সম্মেলনের প্রস্তুতি জটিলতায় পড়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার চেষ্টা করবেন।


কিন্তু বৃহস্পতিবার বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মধ্যে যে প্রাথমিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত হয়েছে। ল্যাভরভের ডেপুটি সের্গেই রিয়াবকভ মঙ্গলবার বলেছেন, এখনই সরাসরি সাক্ষাতের সময় নিয়ে কিছু বলার সময় হয়নি।


হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিয়ার্তো মঙ্গলবার ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, আগামী দিনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্প যেন আগের মতো কোনও ছাড় না নিয়েই পুতিনের সঙ্গে বৈঠক না করেন। গত আগস্টে আলাস্কায় আয়োজিত বৈঠকে পুতিন ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

মঙ্গলবার ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত এবং বর্তমান ফ্রন্টলাইন হবে আলোচনার কেন্দ্র বলে ট্রাম্প যে অবস্থান নিয়েছেন তা সমর্থন করেন তারা।

ট্রাম্প শুক্রবার হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রকাশ্যে এই অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানান। রাশিয়া অবশ্য বলেছে, যুদ্ধবিরতির আগে ইউক্রেনকে আরও কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে।

রয়টার্সসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বৈঠক ছিল উত্তপ্ত। ট্রাম্প একাধিকবার অশালীন ভাষা ব্যবহার করে জেলেনস্কিকে রুশ দাবি মেনে নিতে চাপ দেন।

তবু জেলেনস্কি বৈঠকটিকে সফল বলে বর্ণনা করেছেন। কারণ ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেন।

এই সপ্তাহে ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কিকে অতিথি হিসেবে নিয়ে বৈঠকে বসবেন। প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে, এরপর ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট নামে আরেকটি বৈঠকে। এগুলোতে যুদ্ধ-পরবর্তী ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিষয়ে আলোচনা হবে। রাশিয়া এই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

পুতিন-ট্রাম্প সম্মেলনের সম্ভাব্য স্থান বুদাপেস্ট নিয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে বিরোধ তৈরি হয়েছে। কারণ, হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান এখনও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। যা ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপে বিরল।

সম্মেলনে যোগ দিতে পুতিনকে অন্য ইউরোপীয় দেশের আকাশসীমা পেরোতে হবে। পোল্যান্ড মঙ্গলবার জানিয়েছে, যদি পুতিন তাদের আকাশসীমা দিয়ে যান, তবে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হতে পারে। বিপরীতে, বুলগেরিয়া জানিয়েছে, পুতিন তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবেন।

ইউরোপীয় কূটনীতিকরা বলছেন, ইউক্রেন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের স্বার্থে সমন্বয় তৈরি হয়নি। বুদাপেস্টে সম্মেলন যদি শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়, তবে সেটি হবে যুদ্ধবিরতি আলোচনার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।