বেসামরিক বিমান চলাচল ও ট্রাভেল এজেন্সি আইনে বড় পরিবর্তন
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বিমান পরিবহন ও ট্রাভেল ব্যবসায় স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ ও ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
গুরুত্বপূর্ণ দুই অধ্যাদেশের সংশোধন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের আকাশপথে যাত্রীদের ৮০ শতাংশের বেশি অভিবাসী কর্মী। নতুন দুটি অধ্যাদেশ কার্যকর হলে এই বিশাল যাত্রীগোষ্ঠীসহ সাধারণ যাত্রীদের সেবা হবে আরও আধুনিক, নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব।
বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫
২০১৭ সালের আইন সংশোধন করে এই অধ্যাদেশে বেশ কিছু যুগোপযোগী পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো আইনের দীর্ঘ শিরোনাম ও প্রস্তাবনায় ‘যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ’ শব্দগুচ্ছ যুক্ত করে যাত্রীদের নিরাপত্তা, সুবিধা ও অধিকার রক্ষায় আইনি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিদেশি এয়ারলাইনসের জন্য সাধারণ বিক্রয় প্রতিনিধি (জিএসএ) নিয়োগকে ঐচ্ছিক করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই সঙ্গে দেশীয় এয়ার অপারেটরদেরও জিএসএ নিয়োগে সুযোগ রাখা হয়েছে।
টিকিট বিতরণে স্বচ্ছতা আনতে গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস), নিউ ডিস্ট্রিবিউশন ক্যাপাবিলিটি (এনডিসি) এবং এপিআই-ভিত্তিক ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে টিকিট ব্লকিং, কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি রোধ হবে।
এ ছাড়া প্রথমবারের মতো এয়ার অপারেটরদের ট্যারিফ দাখিল ও মনিটরিংয়ের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব নীতির আওতায় কার্বন নিঃসরণ কমানো, সাসটেইনেশন অ্যাভিয়েশন ফুয়েল (এসএএফ) ব্যবহার ও টেকসই নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা যুক্ত হয়েছে।
অধ্যাদেশে সরকারকে একটি ‘বেসামরিক বিমান চলাচল অর্থনৈতিক কমিশন’ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বিমানবন্দরের ফি, চার্জ, রয়্যালটি ও ভাড়ার হার নির্ধারণে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া সাইবার সুরক্ষা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন ও ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ ট্রাভেল ব্যবসায় অবৈধ অর্থ লেনদেন, মানি লন্ডারিং, টিকিট মজুতদারি, প্রতারণা ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশে নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিতের ১১টি নতুন কারণ যুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—অবৈধ টিকিট বিক্রয়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অননুমোদিত লেনদেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, তৃতীয় কোনো দেশ থেকে টিকিট ক্রয়-বিক্রয়, গ্রুপ বুকিংয়ের পর যাত্রীর তথ্য পরিবর্তন ইত্যাদি।
এসব কর্মকাণ্ডকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড এবং এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া সরকার প্রমাণসাপেক্ষে কোনো ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সাময়িক স্থগিত করতে পারবে। প্রতারণা বা আর্থিক আত্মসাতের ঘটনায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতাও পাবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুটি অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে বিমান পরিবহন ও ট্রাভেল ব্যবসায় শৃঙ্খলা, আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি অভিবাসী কর্মী ও সাধারণ যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং টিকিটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।