বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে আমন ধান, ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায় টানা দুই দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমের আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ফলন ঘরে তোলার আগমুহূর্তে আধপাকা ধান শুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
এ মুহূর্তে এসব নুয়ে পড়া ধানের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে গোছা করে বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত শুধু সদর উপজেলাতেই ৩০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। অন্য উপজেলাগুলোর ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে। চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।
শুক্রবার সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, হলুদ হয়ে আসা ধানক্ষেতগুলো বৃষ্টিতে মাটিতে লুটিয়ে আছে। বিঘার পর বিঘা জমির ধান শুয়ে পড়ায় ফলন ও গুণগতমান নিয়ে উদ্বেগে কৃষকরা।
সদর উপজেলার কচুবাড়ি এলাকার কৃষক হোসেন আলী চার একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। তার কণ্ঠে হতাশার সুর। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে আবাদ করেছি। এখন যখন কাটার সময়, তখনই বৃষ্টি এসে সব নষ্ট করে দিল। জমিতে পানি জমে শীষ ভিজে যাচ্ছে, ফলন অর্ধেক হয়ে যেতে পারে।
আকচা এলাকার কৃষক জগেশ্বর বর্মণ বলেন, যে ধানগাছ শুয়ে পড়েছে, তাতে কয়েক দিনের মধ্যেই পোকা ধরবে। তখন ধান চিটা হয়ে যাবে। এত পরিশ্রমের ফসল এভাবে নষ্ট হতে বসেছে, ভাবতেই পারছি না।
আখানগর এলাকার কৃষক সামিউল ইসলাম জানান, গত বছর ধানের ভালো দাম পাইনি। এবার ভালো ফলনের আশা ছিল; কিন্তু এই ঝড়-বৃষ্টি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
এদিকে জামালপুর এলাকার স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণত এ সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকে; কিন্তু এবারের আকস্মিক বৃষ্টিতে শুধু কৃষিই নয়, দিনমজুরদের জীবনও বিপর্যস্ত হয়েছে। সারা দিনের বৃষ্টিতে শ্রমজীবী মানুষ কাজ করতে পারেননি, ফলে আয়-রোজগার বন্ধ ছিল।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজেদুল ইসলাম জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি—যেসব জমিতে ধান শুয়ে পড়েছে, সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে। এতে ক্ষতি কিছুটা কমবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে এবং কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।