ঢাকা, বাংলাদেশ

ন্যূনতম ৫০ টন ধারণক্ষমতার গুদাম থাকতে হবে ডিলারের

প্রকাশিত :

নিজস্ব প্রতিবেদক : কৃষকদের কাছে সহজে সার পৌঁছে দিতে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ-সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় তিনজন করে ডিলার নিয়োগ করা হবে।

কৃষকদের কাছে সহজে সার পৌঁছে দিতে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ-সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় তিনজন করে ডিলার নিয়োগ করা হবে। ডিলারশিপ পেতে হলে ন্যূনতম ৫০ টন ধারণক্ষমতার গুদাম থাকতে হবে। এছাড়া ৫-১০ টন ধারণক্ষমতার আরো দুটি বিক্রয় কেন্দ্র থাকতে হবে ডিলারদের। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় কৃষিজমির পরিমাণ ও ফসলের নিবিড়তার ওপর ভিত্তি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুপারিশ অনুযায়ী ডিলারের সংখ্যা নির্ধারিত হবে।


কৃষিবিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার নীতিমালা বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রোববার থেকে নতুন নীতিমালা কার্যকর হবে।


এ নীতিমালায় স্বচ্ছ দরপত্র, ডিজিটাল নজরদারি, ডিলার নিয়োগে নতুন যোগ্যতা নির্ধারণ, এক পরিবারে একাধিক ডিলারশিপ নিষিদ্ধকরণ, সাব-ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা-প্রথা বাতিলের মতো বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে ডিলারদের যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, সার ডিলারদের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার নাগরিক হতে হবে। নিজ এলাকায় নিজস্ব অথবা ভাড়ায় ন্যূনতম ৫০ টন ধারণক্ষমতার গুদাম থাকতে হবে। তবে একই গুদামে সার ও বালাইনাশক সংরক্ষণ করা যাবে না। পাশাপাশি খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্ট, গো-খাদ্য, মাছের খাবার ও সবজির দোকানের সঙ্গে গুদাম করা যাবে না।

প্রত্যেক ডিলারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে ও কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার সাম্প্রতিক ব্যাংক সনদ দেখাতে হবে। এছাড়া প্রতিটি ডিলারের নিজ ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে তিনটি বিক্রয় কেন্দ্র থাকতে হবে। এজন্য মূল গুদাম ব্যতীত বাকি দুটি বিক্রয় কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫-১০ টন হতে হবে।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, একজন ডিলারের অধীনে তিনটি বিক্রয় কেন্দ্র থাকবে। প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে সরকারি ভর্তুকি ও বিক্রয়মূল্যসহ যাবতীয় তথ্য প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। বিক্রয়, উত্তোলন ও হিসাব ডিজিটালি সংরক্ষণ করতে হবে। ডিলার তার নিজ এলাকার নির্ধারিত কেন্দ্র ব্যতীত অন্য কোথাও সার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। সরকার অনুমোদিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও থেকে সার কেনা, বিক্রি ও পরিবহন বা সংরক্ষণ করা যাবে না।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি ও ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কেউ ডিলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাজাভোগের দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আবেদন করতে পারবে। এছাড়া একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডিলার হতে পারবেন না।

এদিকে ডিলারশিপের জামানত ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। দুই বছর পরপর ডিলারদের নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। ডিলারদের কার্যক্রম মূল্যায়নের ভিত্তিতে নিয়মিত নবায়ন বা বাতিলের ব্যবস্থাও থাকছে নতুন নীতিমালায়।

এ নীতিমালায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ডিলারশিপের দ্বৈত কাঠামো বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে (বিএডিসি) একীভূত করে এক ছাতার নিচে আনা হয়েছে। ফলে আগের মতো ‘বিসিআইসি ডিলার’ ও ‘বিএডিসি ডিলার’ নামে কোনো বিভাজন থাকছে না। একই ডিলার ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া উভয় ধরনের সার বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া কোনো ডিলার সরকারি চুক্তি ভঙ্গ করলে তার ডিলারশিপ বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করার বিধানও রয়েছে নতুন নীতিমালায়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং বিভাগের প্রধান আহমেদ ফয়সল ইমাম (অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ার দিন থেকে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯’, ‘বিএডিসির সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ পদ্ধতি ও শর্তাবলি ২০১০’ এবং সার ডিলার সম্পর্কিত আগের সব আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। বর্তমানে যারা বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলার হিসেবে আছেন ও স্বচ্ছভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা আবেদন করলে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন। এ ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী জামানতসহ অন্য সব শর্ত পূরণ করতে হবে।