ঢাকা, বাংলাদেশ

রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় ব্যাখ্যা বিশৃঙ্খলা আনে: তারেক রহমান

প্রকাশিত :

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতায় গেলে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় বিধানের উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা কখনো কখনো সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির কারণ হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে বিএনপি এমন একটি কল্যাণমূলক সমাজ, সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে- যে রাষ্ট্র ও সমাজে মুসলমানরা নিঃসংকোচে কোরআন সুন্নাহর অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। নির্ভয়ে, নিরাপদে এবাদত ও বন্দেগি করতে পারবেন। একইভাবে অন্য ধর্মের মানুষেরাও নিরাপদে-নিশ্চিন্তে যার যার ধর্ম এবং সংস্কৃতি পালন করতে সক্ষম হবেন। বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতি কিংবা মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপোষ করেনি। ইনশআল্লাহ, ভবিষ্যতেও করবে না।

রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সম্মেলনে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণ, ইমাম-খতিবদের সামাজিক নিরাপত্তা, সম্মানজনক ভাতা এবং মসজিদ পরিচালনার আধুনিক নীতিমালা প্রণয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়।


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ইসলামী মূল্যবোধী বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি মনে করে, ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে মতবিরোধ বা ভিন্নমত যাতে রাষ্ট্র এবং সমাজে ফিতনা সৃষ্টি কিংবা বিশ্বাসী সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে অনেককে সৃষ্টির কারণ না হয়, এ বিষয়ে নিশ্চিত করতে নেতৃস্থানীয় ওলেমা-মাশায়েক-ইমাম-খতিবরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে সব মিলিয়ে মসজিদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ বা তারও কিছু বেশি হতে পারে। এই মসজিদগুলোতে কমবেশি প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছেন। লাখ লাখ মসজিদ ও মাদ্রাসা এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন-মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিমূলক কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশ কখনোই টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা থেকে বিএনপি আগামী দিনের কর্মসূচিতে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ঈমান-ইসলাম এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে আমাদের ঐক্যের বিকল্প নেই। দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা সুসংহত করার জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। মহানবীর ন্যায়পরায়ণতা আদর্শ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনায় বিএনপির মূল মন্ত্র হবে ন্যায় পরাণয়তা, ইনশাআল্লাহ। মহানবীর ন্যায় পরায়ণতার আদর্শে উজ্জীবিত, একটি ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি দেশের সব ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন-আলেম-ওলেমা-পীর-মাশায়েখদের দোয়া এবং সমর্থন চায়।

ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন-আলেম-ওলেমা-পীর-মাশায়েখদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্তর চেয়ারম্যান বলেন, আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আমার মায়ের জন্য দোয়া চাই। আমার দলের নেতাকর্মী সমর্থক এবং সর্বোপরি দেশবাসীর জন্য দোয়া চাই। দেশ এবং জনগণের কল্যাণে আল্লাহ যেন আমাকে এবং আমাদের দলকে প্রতিটি সৎকর্ম বাস্তবায়নের সুযোগ দেন। এজন্য আপনাদের দোয়া, সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই।

ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন-আলেম-ওলেমা-পীর-মাশায়েকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনাদের উপস্থাপিত দাবিগুলোর বেশ কয়েকটি দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করার সব রকম সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। আপনারা ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। আপনাদের এই দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক। অনেক মসজিদে, মসজিদ কমিটির ইচ্ছা ও অনিচ্ছার উপরে ইমাম ও মুয়াজ্জিন চাকরি নির্ভর করে। আমি মনে করি, এটি হওয়া উচিত নয়। এটি হতে পারে না। এটিকে আমি ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বিরুদ্ধে অন্যায্য আচরণ বলে মনে করি। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সার্ভিস রুল প্রণয়নের ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ- বিএনপি সরকার গ্রহণ করবে, ইনশাআল্লাহ। অন্যান্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ বিএনপি সরকার ইনশাআল্লাহ গ্রহণ করবে।

তারেক রহমান বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরকে সম্মানী দেওয়ার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে আমরা বাস্তবায়ন করব ইনশআল্লাহ । একইসঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরকে আর্থিকভাবে আরো স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ইমাম- মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে আরো বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করার একটি চিন্তা-ভাবনা আমাদের রয়েছে।