জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ‘ত্রিভুজ প্রেম’, দাবি পুলিশের
নিজস্ব প্রতিবেদক : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেনকে (২৫) হত্যার নেপথ্যে ‘ত্রিভুজ প্রেম’কে দায়ী করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এ বাহিনী জানিয়েছে, তাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল ঘটনার প্রায় এক মাস আগে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
গত রোববার বিকালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসার নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্তের দাগ ছিল। রাত ১১টার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।
জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
এ ঘটনায় আজ সকাল ১১টার দিকে বংশাল থানায় হত্যা মামলা করেছেন জোবায়েদের ভাই। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন মাহির রহমান (১৯), বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০)।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, মাহিরের সঙ্গে বর্ষার দেড় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যেই বাসায় পড়াতে গিয়ে জোবায়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বর্ষার। এ ত্রিভুজ প্রেমই জোবায়েদের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে।
মাহির ও বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, এক পর্যায়ে বর্ষা মাহিরকে বলেন, জোবায়েদকে না সরালে তিনি মাহিরের হতে পারবেন না। সেখান থেকেই এ হত্যার পরিকল্পনা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ জানায়, গত রোববার বিকাল ৪টায় বর্ষাকে পড়াতে যান জোবায়েদ। এ তথ্য আগ থেকেই মাহিরকে জানিয়ে দেন বর্ষা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জোবায়েদ পৌঁছানোর আগেই বন্ধু আয়লানকে নিয়ে বাসার নিচের গলিতে অবস্থান নেয় মাহির। জোবায়েদ বাসার নিচে এসে পৌঁছালে বর্ষাকে নিয়ে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় মাহির বর্ষাকে ছেড়ে দিতে বললে জোবায়েদ অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে মাহির জোবায়েদের গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।
ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, বর্ষার বাসার নিচে ছুরিকাঘাতের পর জীবন বাঁচাতে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে আসেন জোবায়েদ। তৃতীয় তলা পর্যন্ত ওঠার মধ্যেই বেশ কয়েকটি ফ্লাটে নক করেন তিনি। বর্ষার কাছেও বাঁচার আকুতি জানান। তবে কারো সাহায্য পাননি তিনি।
ব্রিফিংয়ে মাহিরকে তার মা থানায় সোপর্দ করেছেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এস এন নজরুল ইসলাম জানান, আসামি গ্রেফতারের কৌশল হিসেবে তারা মাহিরের পরিবারকে চাপ দেন। পরে ওনারা মাহিরকে হস্তান্তর করেছেন। এটা পুলিশের কৌশলের অংশ।
ব্রিফিংয়ে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের মুহাম্মদ তালেবুর রহমান, লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি, অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আমিনুল কবীর তরফদার উপস্থিত ছিলেন।