ঢাকা, বাংলাদেশ

কুড়িগ্রামে হঠাৎ বন্যায় করণীয় কী, জানাল কৃষি বিভাগ

প্রকাশিত :

‘শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে…’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের মতো রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম গ্রামের আবদুল মালেকের জীবনকাহিনি। কবিতায় উপেনের দুই বিঘা জমি মহাজনে কেড়ে নিলেও আবদুল মালেকের দুই একর জমি তিস্তা নদী গিলে খেয়েছে। শেষ সম্বল তিস্তার তীরে দুই বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ওই দুই বিঘা জমিও পানিতে ডুবে গেছে।


মঙ্গলবার সকালে রাজারহাট উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, উজানের ঢলে পানি বেড়ে জেলার নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। কোথাও কোথাও ঘরবাড়িতেও পানি উঠেছে। এতে জেলার ১ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আমন ধান ও শাকসবজির ক্ষতি বেশি হয়েছে। ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম, নামা ভরট এলাকায় কয়েকজন কৃষককে বন্যায় ডুবে যাওয়া আমন খেত থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করতে দেখা যায়।

এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের দ্রুত মাঠে কাজ শুরু করতে হবে। ডুবে যাওয়া জমিতে সাদা পানির স্প্রে করলে কাদা জমে থাকা স্তর নরম হয়ে যাবে। এতে মাটির অক্সিজেন প্রবাহ বাড়বে এবং গাছের শিকড় টিকে থাকবে। যেসব জমিতে ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে, সেসব জমিতে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি ফসল, যেমন সরিষা, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন রোপণের প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।

কুড়িগ্রামের ১ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আমন ধান ও শাকসবজির ক্ষতি বেশি হয়েছে
কুড়িগ্রামের ১ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আমন ধান ও শাকসবজির ক্ষতি বেশি হয়েছেছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হঠাৎ বন্যায় জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। সদ্য রোপণ করা ধানখেতগুলো কয়েক দিন ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় গাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এতে আমন ধানের ক্ষতির আশঙ্কা আছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির প্রভাবে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি দ্রুত বেড়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বর্তমানে নদীগুলোর পানি সমতলে কমছে। আগামী তিন দিন পানি কমবে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।