গ্লুকোমা রোগীর জীবনযাপন
গ্লুকোমা হল- ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেওয়া চোখের রোগ, যা অনেক সময় শুরুতে বোঝা যায় না।
তবে সময়মতো শনাক্ত ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে এর অগ্রগতি রোধ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্লুকোমা রোগীদের জন্য ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাপন ও খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আনা জরুরি। এতে চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ‘অপটিক নার্ভ’য়ের ক্ষতি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়।
ভিশন আই হাসপাতালের গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট ডা. জিনাত জাহান বলেন, “গ্লুকোমা রোগীদের অনেকেরই প্রশ্ন থাকে— সব খাবার খাওয়া যাবে কিনা, বেশি সময় মোবাইল বা টিভি দেখা যাবে কিনা, দীর্ঘ সময় পড়াশোনা বা অফিসের কাজ করা যাবে কিনা?- আসলে গ্লুকোমা রোগীর জীবনযাপন কিছুটা সচেতন হলে একদম স্বাভাবিকভাবেই চলা যায়।”
খাদ্যাভাসে সতর্কতা ও ভারসাম্য
গ্লুকোমা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাবারে নিষেধ নেই। তবে কিছু খাবার চোখের জন্য উপকারী এবং রোগের অগ্রগতি ধীর করে দেয়।
ডা. জিনাত বলেন, “অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ভিটামিন এ, সি এবং ই–এর উৎস হিসেবে সবুজ শাকসবজি ও রঙিন ফল নিয়মিত খাওয়া উচিত। এসব ভিটামিন চোখের কোষকে রক্ষা করে ও অপটিক নার্ভকে মজবুত রাখে।”
যে খাবারগুলো বেশি উপকারী
সবুজ শাকসবজি: পালং, কলমি, ব্রকলি, ধনেপাতা, মেথি ইত্যাদি।
রঙিন ফল: কমলা, গাজর, পেঁপে, আম, লাল আঙ্গুর, বেরিজাতীয় ফল।
ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস: সামুদ্রিক মাছ, সার্ডিন, টুনা, রুই-কাতলা, তিসি বা ফ্ল্যাক্স সিড।
এই খাবারগুলো চোখের ভেতরের রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং অপটিক নার্ভের ক্ষয় রোধে সাহায্য করে।
যা থেকে বিরত থাকতে হবে
অ্যালকোহল ও ধূমপান চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ (ইন্ট্রাওকুলার প্রেশার) বাড়িয়ে গ্লুকোমা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। তাই এগুলো একেবারে বন্ধ করা জরুরি।
তেমনি, অতিরিক্ত চা বা কফি পান করলেও চোখের প্রেশার বেড়ে যায়। দিনে এক বা দুই কাপের বেশি না পান করাই ভালো।
পানি পানেও সচেতনতা
অনেকেই ভাবেন বেশি পানি পান করলে শরীর ভালো থাকে, তবে গ্লুকোমা রোগীর ক্ষেত্রে একসঙ্গে অনেক পানি খাওয়া উচিত নয়।
ডা. জিনাত পরামর্শ দেন, “একবারে এক লিটার পানি খাওয়া যাবে না। আধা লিটার পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে, তবে সেটা ধীরে ধীরে। একসঙ্গে অতিরিক্ত পানি পান করলে চোখের চাপ বেড়ে যেতে পারে।”
দৈনন্দিন কাজ ও স্ক্রিন টাইম
গ্লুকোমা রোগীদের বড় একটি প্রশ্ন মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটার দেখা কি চোখের ক্ষতি করে?
ডা. জিনাত বলেন, “এসব স্ক্রিনিং টাইমে চোখের বড় ধরনের ক্ষতি হয় না। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে চোখের ওপর চাপ কমে।”
যা যা মাথায় রাখতে হবে
কম আলোতে কখনই মোবাইল, টিভি বা বই পড়া যাবে না। এতে চোখের প্রেশার বাড়ে ও দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।
পর্যাপ্ত আলোতে থেকেই সব কাজ করা উচিত।
প্রতি ২০ মিনিট পর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ২০ সেকেন্ড দূরের কোনো দিকে তাকিয়ে বিশ্রাম দিন (২০-২০ নিয়ম)।
অফিসের কাজ বা দীর্ঘ সময় পড়াশোনার পর চোখে কৃত্রিম অশ্রু বা ড্রপ ব্যবহার করলে চোখের শুষ্কতা কমে।