ঢাকা, বাংলাদেশ

দিনাজপুরে ব্রি ধান-৯৮ আউশ চাষে সাফল্যের গল্প

প্রকাশিত :

দিনাজপুর প্রতিবেদক : দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্নাই গ্রাম আজ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একসময়ের অনাবাদি ও বেলে মাটির জমি এখন সোনালি আউশ ধানে ভরে উঠেছে। সমবায় ভিত্তিতে ব্রি ধান-৯৮ জাতের আউশ চাষ করে কৃষকেরা এখন বাম্পার ফলনে উজ্জীবিত, মুখে ফুটেছে বিজয়ের হাসি।

আউশ ধানের বীজতলা চাষ শুরু থেকে মাত্র ১১০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলেছেন। একর জমি থেকে ৮৫ থেকে ৯০ মণ ধান পাচ্ছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ থেকে প্রদত্ত বীজ, সার ও কীটনাশকের প্রণোদনা কাজে লাগিয়ে চাষিরা অনাবাদি জমিকেও উৎপাদনশীল করে তুলেছেন। বর্তমানে কাঁচা ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়। শুধু তাই নয়, গো-খাদ্যের সংকটময় সময়ে ধানের খড়ও কৃষকদের বাড়তি আয়ের উৎস হয়েছে— একশ আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। ফলে ধানের পাশাপাশি খড় বিক্রি করেই চাষিরা তাদের খরচের বড় অংশ পুষিয়ে নিচ্ছেন।

চলতি বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে জমিতে বীজতলা তৈরি করে রোপণ করা হয় এ ধান। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেচ, সার ও কীটনাশক ব্যবহারে ফলনও হয়েছে আশাতীত।

এখন মাঠজুড়ে পাকা ধানের সোনালি শোভা। কৃষকেরা ধান কাটা শুরু করেছেন এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কর্তন শেষ করার আশা করছেন। ধান কেটে নেয়ার পর একই জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের প্রস্তুতিও চলছে।

সোনালি ধানে ভরে ওঠা কর্নাই গ্রামের মাঠ এখন শুধু কৃষকের নয়, পুরো অঞ্চলের আশার প্রতীক। আউশ ধান-৯৮ এর সাফল্য দিনাজপুরের কৃষি চিত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি ৮৫ শতক জমিতে ব্রি ধান-৯৮ ধান আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে— ৮৫ মণ ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘এই ধান বিক্রি করেই আগামী মৌসুমে আলুর চাষে খরচ মেটাতে পারব।’

আরেক কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, গত বছর থেকে সমবায় ভিত্তিতে আউশ ধান চাষ শুরু হয়েছে। এবার উন্নতমানের ব্রি ধান-৯৮ জাতের আবাদ করে আরও বেশি লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সমবায়ে চাষ করার কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হচ্ছে, ফলনও ভালো হচ্ছে। আগামীতেও এই ধান আবাদ করব।’

কৃষক মোশারফ হোসেন জানান, ২০০ শতক জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছি। এ সময়টায় কৃষকদের হাতে ফসল বা টাকা-পয়সা খুব একটা থাকে না। তাই এখন ধান ঘরে তোলা তাদের জন্য আশীর্বাদ। তিনি বলেন, ‘ধান বিক্রি করে আমরা আলু চাষের খরচ যোগাচ্ছি। এই সময়ে ধান উৎপাদনের আনন্দ অন্য কোনো ফসলে নেই।’

দিনাজপুর সদর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান আরিফ বলেন, একসময় এ অঞ্চলের জমি শুধু রবি শস্যের জন্য ব্যবহার হতো। আমন ধান এখানে তেমন ফলতো না। কিন্তু সরকারের উদ্যোগে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আউশ ধানের আবাদ শুরু করা হয়েছে। এখন সেই জমিতেই তিন ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কৃষকরা শুধু ধান বিক্রি করেই লাভবান হচ্ছেন না, খড় বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম তুষার জানান, এ বছর উপজেলাতেই ৬৭০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ২২০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে— সরকারের সেই নির্দেশনার ভিত্তিতেই কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এখন কৃষকেরা স্বল্প সময়ে ফলন পাচ্ছেন, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছেন।’