চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমে চায়ের নিলামে গড় দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ২৬ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক : উৎপাদন খরচের চেয়ে নিলামে কম দামে চা বিক্রি হওয়ায় বেশ কয়েক বছর লোকসানে ছিল বাগানগুলো। ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো নিলামে চা বিক্রিতে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এতেও সংকট উত্তরণ না হওয়ায় চলতি বছর সেটি আরেক দফা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। এ কারণে চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমের নিলামগুলোয় প্রতি কেজি চা বিক্রি হচ্ছে আগের মৌসুমের তুলনায় গড়ে প্রায় ২৬ টাকা বেশি দামে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সর্বশেষ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০২৫-২৬ মৌসুমের নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি ১৭ লাখ ৪৬ হাজার কেজি চা। এসব চায়ের মোট মূল্য ছিল (শুল্ক ও মাশুল ব্যতীত) ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ হিসাবে চায়ের প্রতি কেজির গড় মূল্য ছিল প্রায় ২৩৬ টাকা। ২০২৪-২৫ মৌসুমের একই সময় ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে ৭৫৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায়। সে সময় প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ছিল ২১০ টাকার বেশি। এ অনুযায়ী ২০২৫-২৬ মৌসুমের নিলামে চায়ের গড় দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ২৬ টাকা।
চট্টগ্রামে সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ছিল ২৫৩ টাকা ২৬ পয়সা। তার আগে ২৪তম নিলামে গড় মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২৫৪ টাকা ৩৩ পয়সা। ২৫তম নিলামে ৭৭ শতাংশ ও ২৪তম নিলামে ৭০ শতাংশের বেশি চা বিক্রি হয়ে যাওয়ায় চলতি নিলাম বর্ষের শেষেও চায়ের ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বাগান মালিকরা।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে ন্যূনতম মূল্য পরিবর্তন করে মানভেদে চায়ের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। চায়ের বর্তমান মূল্য ও করণীয় নির্ধারণে অংশীজনদের সঙ্গে এক বৈঠকে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের চায়ের ন্যূনতম মূল্য কেজিপ্রতি ২৪৫ টাকা এবং উত্তরাঞ্চলের বটলিফ চায়ের মূল্য ন্যূনতম ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৪ মে বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদুল আজহার পর এ নতুন দর কার্যকর করা হয়।
চা বোর্ডের নথি অনুযায়ী বাগান থেকে চা সরবরাহের পর ব্রোকার প্রতিষ্ঠানগুলো সাতটি গ্রেডে চায়ের লিকার রেটিং করে। এ পদ্ধতিতে ৪ ও ৪ প্লাস মানের সিলেট ও চট্টগ্রামে উৎপাদিত চায়ের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩১৫ টাকা এবং বটলিফের দাম ২৯০ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে ৪ মাইনাস চায়ের দাম ২৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০৫ টাকা (সিলেট-চট্টগ্রাম) ও বটলিফে ২৬০ টাকা করা হয়েছে। ৩ প্লাস প্লাস ও ৩ প্লাস মানের চায়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ২৯৫ (সিলেট-চট্টগ্রাম) ও ২৪০ (বটলিফ) এবং ২৮৫ ও ২৩০ টাকা। আগে যা ছিল ২৭০ ও ২৪৫ টাকা।
৩ লিকার রেটিংয়ের চায়ের দাম ২৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৭৫ ও ২১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ৩ মাইনাস লিকার রেটিংয়ের চায়ের দাম ২২৭ টাকা থেকে বেড়ে ২৬৫ ও ১৯৫ টাকা, ২ প্লাস চায়ের দাম ২১০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫৫ টাকা ও ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বনিম্ন স্তর ২ লিকার রেটিং এর চায়ের দাম ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে সিলেট-চট্টগ্রামে ২৪৫ ও বটলিফে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশী চা সংসদের সভাপতি কামরান তানভিরুর ইসলাম বলেন, ‘চায়ের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় নিলামে মূল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় বৃহৎ শিল্পের মতো ১৪-১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। নিলামের ওপর নির্ভরশীল থাকায় লোকসানে ৩১টি বাগান চরম সংকটে রয়েছে। নগদ অর্থপ্রবাহ না থাকলেও ঋণ পেতে নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে চা উদ্যোক্তাদের। দ্রুত এসব সংকট নিরসন করা না গেলে ক্রমান্বয়ে দেশের আরো অনেক বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিআরআরজনিত কারণে ঋণপ্রাপ্তির প্রতিবন্ধকতা নিরসন না করলে চা শিল্প নতুন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে।’
বাজারসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিলামে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে চায়ের দাম বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে মানভেদে সব ধরনের চায়ের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ন্যূনতম ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা।